কুমার প্রীতীশ বল: দূরে কোথাও একটা ঠুস করে শব্দ হয়। কানুগাঁও-র মানুষগুলো হুড়মুড় করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। মানুষগুলো দিনে পাহাড়ে থাকে। সন্ধ্যা নামলে বাড়ি ফেরে।
হীরেণ খুড়ো প্রতিদিন যাওয়ার সময় বলেন, আজ শেষ যাওয়া। কাল আর যাব না। মরলে বাড়িতে মরব।
পরদিন সকালবেলা, সবাই যখন শব্দ শুনে বাক্সপেটরা নিয়ে ছোটে, আবার তিনিও ছোটেন।
প্রতিদিন এমনই হয়। ঐ ঠুস পর্যন্ত। পাকিস্তানি সেনারা আসে না।
হীরেণ খুড়োর ছেলে যতীন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। যতীন বলেছে, এটা রাইফেলের আওয়াজ।
জাকিরা শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়েছে। সে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে অপারেশনে যায়। সেই গুলি ফোটায়। এরপরে আরো কদিন ঠুস শব্দটা হয়। শব্দ শুনলে কানুগাঁও-র মানুষগুলো বাড়ি ছেড়ে পালায়। হীরেণ খুড়ো যান না।
একদিন, ঠুস-ঠুস-ঠুস। তিনটা শব্দ হলো। প্রথম শব্দে সবাই পালাল। পরে আরো দুটো শব্দ হয়। হীরেণ খুড়োর মনে সন্দেহ হলো, আজ সত্যি কি পাঞ্জাবিরা আসছে?
তাহলে তো মহাবিপদ। হীরেণ খুড়ো ভাবতে ভাবতে দেরি করে ফেলেন। অবশেষে বের হলেন।
যতীনের পোষা ময়নাটা ডানা ঝাপটিয়ে চিৎকার শুরু করল, যতীন। ও যতীন। হীরেণ খুড়ো। ও হীরেণ খুড়ো।
হীরেণ খুড়ো আগে যে কদিন পালিয়েছিলেন ময়নাটাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ কেন জানি নিলেন না। ময়নার আত্মচিৎকার খুড়োর সহ্য হলো না। উঠানটা পার হয়ে সদর রাস্তায় উঠেও ছিলেন। তারপর আবার ফিরে আসেন। ছাদের টপ বারান্দা থেকে ময়নার খাঁচাটা নিয়ে হীরেণ খুড়ো উঠানের মাঝ বরাবর আসেন।
আবার শব্দ হলো, ঠুস-ঠুস। জাকিরা এবার আর ফাঁকা আওয়াজ করেনি।
মুক্তিযোদ্ধা যতীনের বাবা হীরেণ খুড়োর হাত থেকে ময়নার খাঁচা মাটিতে পড়ে যায়। খুড়ো লুটিয়ে পড়েন খাঁচার ওপর। তার শরীরের চাপে খাঁচার দরজা খুলে যায়। ময়নাটা উড়ে পালিয়ে যায়।
-ইত্তেফাক