মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার। অন্য সরকার ও অংশীদার রাষ্ট্র যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝাপড়া ও আলাপ-আলোচনা হয় তাদেরও অগ্রাধিকার এটি। দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি উদ্বুদ্ধ করতে এ নিয়ে বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে জানিয়ে মার্কিন মন্ত্রী আরও বলেন, এটা এ জন্য যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফেরার আগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষরা একটি বিকল্প সমাধান খুঁজে পায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এসব কথা বলেন। মার্কিন মন্ত্রী আরও বলেন, মিয়ানমার শাসকদের গণহত্যার কারণে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হয়ে গেছে। সময় এসেছে অন্যান্য সমাধান এবং একটি সমন্বিত সমাধানের। রোহিঙ্গাদের জন্য একটি সমন্বিত সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করতে পেরে আমি আনন্দিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হচ্ছে তারা যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, যেটা তারাও চায়। কিন্তু সেই যাওয়াটা হতে হবে নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনকভাবে এবং তা হতে হবে টেকসই।
এটা এমন সমাধান যা রোহিঙ্গা, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্র সবাই চায়। যখন সেই সমাধান হচ্ছে না, তখন অন্য সমাধান প্রয়োজন।
বিশেষ করে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ তাদের জন্য বাড়তি সমাধান দরকার। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করার জন্য ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কাজ করতে পেরে এবং তাদেরকে তৃতীয় দেশে স্থানান্তর চেষ্টা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
মার্কিন প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন মন্ত্রী মোমেন এদিকে মার্কিন মন্ত্রীকে বিদায়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন। বলেন, তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন আটকে থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। তার ভাষ্যটি ছিল এমন ‘প্রত্যাবাসনই হচ্ছে সমাধান। এগুলো একটা অংশ যাবে।
এগুলো ওদের একটা দায়বদ্ধতা মেটানোর জন্য। রোহিঙ্গা কেবল আমাদের মাথাব্যথা না, সবার মাথাব্যথা, বিশ্বনেতাদের মাথাব্যথা। তারা দেখাবে যে, আমরা কিছু রোহিঙ্গাকে সাহায্য করেছি।’ মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমেরিকা এবং অনেকগুলো বন্ধুপ্রতিম দেশ ওদেরকে মানবিক সাহায্য করেছে। আমাদের দেয় না, ওদের দেয়। এটা ঠিক আছে। এখন কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে তার দেশের লোকদের বলতে পারবে, আমরা তো নিয়েছি কয়েকজনকে। বলবে না কতো জন। অনেক দিন ধরে আমেরিকা, কানাডা রোহিঙ্গাদের নিতে চায়, কিন্তু বাংলাদেশ রাজি ছিল না। এখন কেন রাজি হয়েছে এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা রাজি হয়েছি, প্রথম যেদিন আমি মন্ত্রী হয়েছি সেদিন থেকেই। আগে ধারণা ছিল, এটা হলে রোহিঙ্গারা আরও আসবে। তবে, আমরা রাজি হয়েছি একটা শর্ত আছে আমাদের। মিয়ানমার বলেছে- ২০১৬ সালের পর যারা এসেছে, তাদেরকে ভেরিফাই হওয়ার পর নিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে যারা এসেছেন, প্রায় ২৯ হাজার ইউএনএইচসিআরের ক্যাম্পে ছিল। আমরা আগে বলেছি, আগে যেগুলো ছিল, মিয়ানমার যেগুলো নেবে না, ওদেরকে নেয়ার জন্য।