বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো ধরনের অপপ্রচারে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক উন্নত দেশ বিপদের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। আজ সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২’ ও ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স’-এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপদে এবং সমস্যার সম্মুখীন, তাদের রিজার্ভ কমছে। সে অবস্থায় আমরা বলতে পারি যে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখনই দেশ একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায়, তখন সবার কাছে (স্বার্থান্বেষী মহলের) এটা পছন্দ হয় না। এটাই হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোভিডের আগে আওয়ামী লীগ ৮ শতাংশের ওপরে তুলেছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ এবং এর পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এটাকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধনী দেশগুলোও আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায়ও বাংলাদেশকে এখনো আমরা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ সময় নানা কথা বলে ভয়ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন এই সংকটে অনেক ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নানা পদক্ষেপ নিই। অথচ জ্বালানি নিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পক্ষে টানা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় যাতায়াত ও আমদানি বন্ধ ছিল। এ জন্য রিজার্ভ জমে যায়। পরে সব চ্যানেল খুলে গেলে আমাদের আমদানিতে রিজার্ভ ব্যয় করতে হয়েছে। টিকা কেনা, টিকা গবেষণায় অর্থ দেওয়াসহ করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম ক্রয় করতে আমাদের অনেক টাকা লেগেছে। এগুলোর জন্য আমাদের ডলার খরচ হয়েছে।’
তিনি বলেন, যখন টিকা নিয়ে কেবল গবেষণা চলছে, তখন সরকার ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার টিকা আনার জন্য বুকিং দেয় এবং দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকি নেয়। অথচ অনেক উন্নত দেশও বিনা মূল্যে টিকা দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় দেশের ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণিকে সরকার যে আর্থিক প্রণোদনা দেয়, তাতেও অর্থ ব্যয় হয়। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে অর্থ সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। ফলে করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতিও ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যে গম একসময় ২০০ ডলারে পাওয়া যেত, তা এখন ৬০০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। যে পরিবহন ব্যয় ৮০০ ডলার ছিল, তা ৩ হাজার ৮০০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখানে রিজার্ভ খরচ করতে হলেও তাঁর সরকার জনগণের কথা বিবেচনা করে কোনো কার্পণ্য করেনি।